শৈশবের কান্ডকারখানাগুলো
অহনার আর মেঘনা দুই বোন। অহনা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে, বেশ শান্তশিষ্ট স্বভাবের। অন্যদিকে মেঘনার বয়স মাত্র 3, সম্প্রতি বাড়ির পাশেই এক নার্সারী-স্কুলে ভর্তি হয়েছে। বেশ ছটপটে, মাথার মধ্যে সব সময় কিছু না কিছু দুস্টুমির প্ল্যান চলতেই থাকে। দুই বোনের মধ্যে মিল খুবই কম, মেঘনা ছোট, তাই পরিবারে সকলের কাছে আদরের। অহনার হিংসে হয় না বললে ভুল হবে, তবুও সে বোনকে খুব ভালোবাসে, স্কুল থেকে ফিরেই বোনের খোঁজ শুরু। তার সাথে কিছুক্ষণ খেলার পরই বাকি খাওয়া দাওয়া বা অনান্য কাজ। মেঘনাও দিদির জন্য চাতকের মতো অপেক্ষায় থাকে, দিদি আসা মাত্রই দিদিকে জড়িয়ে ধরে। সারাদিন কি করেছে, স্কুলে কি কি ঘটেছে, সব বৃত্তান্ত শোনানো চাই ই চাই।
চকলেট, কেক, বিস্কুট অন্য অন্য যে কোনও ধরনের খাবার-দাবার বাড়িতে এলে, যদিও মেঘনা ছোট, তবুও বাবা-মা দুজনকে সমান সমান ভাগ করে দেয়। মেঘনা নিজের ভাগ অতি দ্রুত শেষ করে অহনার ভাগের দিকে নজর বসায়। অহনা যতই লুকোনোর চেষ্টা করুক না কেন, মেঘনা ঠিক খুঁজে বের করে খেয়ে ফেলবেই। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া চরমে ওঠে। মাঝে মাঝে হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়।
সম্প্রতি অহনার জন্মদিনে সে এক বাক্স ফেভারিট চকলেট উপহার পেয়েছে, অহনা সেই চকলেট খেতে খুবই ভালোবাসে, ইচ্ছে ছিল পুরো বাক্স ভর্তি চকলেট একাই নেবে এবং প্রতিদিন দুপুরে স্কুল থেকে ফিরেই একটি করে খাবে, তবুও মায়ের কথামত কিছু চকলেট অনিচ্ছাকৃত ভাবে বোনকে দিল। বাকি বুক শেলফে বইয়ের পেছনে ভালো করে লুকিয়ে রাখল।
পরের দিন স্কুল থেকে ফিরে অহনা একটি চকোলেট খেতে গিয়ে লক্ষ্য করলো বাক্সের চকলেট প্রায় অর্ধেক, তার মানে মেঘনা গতকালের সব চকোলেট গুলো শেষ করে বাকিগুলোতে থাবা মেরেছে। বোনের উপর খুব রাগ হচ্ছিল, তবুও কিছু বলল না। মায়ের সম্মতি নিয়ে এবার বাক্সটি
আলমারীর উপরে তুলে রাখল, মনে মনে ভাবল, এবার জব্দ। সে নিশ্চিত যে মেঘনার হাত কোনও মতেই উপরে পৌঁছবে না।
পরের দিন স্কুল থেকে ফিরে দেখে মেঘনা বিছানায় শুয়ে আছে এবং তার ভান পায়ে প্লাস্টার করা, সে কিছুই বুঝতে পারছে না, মাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পাড়লো পুরো ঘটনা। প্লাস্টিকের টুল নিয়ে চকোলেটের বাক্স নামাতে গিয়ে সব বিপত্তি। ভাগ্যক্রমে হাড় ভাঙে নি, কিন্তু চিড় ধরেছে, তবুও প্রায় 6 সপ্তাহ বিছানায় থেকে উঠা নামা বন্ধ।।
অহনার খুব কান্না পেল, ভাবতেই পারছে না তার জন্যই মেঘনার এই দশা, বোনকে জড়িয়ে কিছুক্ষণ খুব কাঁদলো। বারবার নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলো, ওদিকে বেচারি মেঘনা বিস্মৃত, ফ্যালফ্যাল করে শুধু দিদির দিকে তাকিয়ে আছে, কিছুই বুঝতে পারছে না, ভুল সে নিজে করেছে কিন্তু দিদি কেন কাঁদছে?
অহনা মায়ের কোমল স্পর্শ পেয়ে মায়ের দিকে দেখল আর ছুটে গিয়ে পুরো চকোলেট মেঘনাকে দিয়ে বলল, সব তোমার!! আর কোনও দুস্টুমি চলবে না, কেমন?
মেঘনাও মাথা ঝোঁকালো।।
কিন্তু ঝপ করে বাক্সটি অহনা নিজের কাছে রেখে দিল আর বলল একদিনেই সব খেতে পারবে না দুস্টু কোথাকার!! প্রতিদিন সকালে একটি করে পাবে।
অহনার কান্ডকারখানা দেখে মা হেসে ফেলল।।