ধারচুলা – এবং পুরাকথা
বর্তমানে উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলার ধারচুলার কাছাকাছি ধোউলিগঙ্গা নদীর উপর তৈরি এক জলবিদ্যুত পাওয়ার স্টেশনএ কর্মরত। কর্মসুত্রে হিমালয় পর্বতমালাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি ও হিমালয়ের অপরূপ প্রাকৃতিক রুপ ও সৌন্দর্যকে প্রতিনিয়ত অনুভব করেছি/করছি। পর্বতমালার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে বিচরণ করার সুযোগ ভাগ্যে জুটেছে। আমার বর্তমান বাসস্থান ধারচুলা, হলদ্বানি/কাঠগোদাম থেকে প্রায় ৩১০ কিমি দূরে অবস্থিত, এক সুদীর্ঘ ১২ ঘণ্টার বাসে বা ছোট্ট ট্যাক্সিতে পাহাড়ি যাত্রাপথ। ধারচুলা কালি নদীর উপর অবস্থিত। এই কালি নদী মূলতঃ ধোউলিগঙ্গা (দারমা ভ্যালী থেকে উৎপত্তি) ও কালী নদীর (ভারতের ব্যান্স ভ্যালী থেকে উৎপত্তি) মিলিত রুপ। ধারচুলা থেকে প্রায় আরও ২৩ কিমি উপরে তাওাঘাটে দুই নদীর মিলন এবং পরবর্তীতে কালি নদীর নামে পরিচিত। পুনরায় এই কালি নদী ধারচুলা থেকে নীচে প্রায় ২৮ কিমি দূরে জলজিবি নামক জায়গায় নন্দাদেবী পর্বতমালা থেকে উতপত্তি গৌরিগঙ্গা নদীর সঙ্গে মিশে পরবর্তীতে মহাকালী নদী নামে পরিচিত। এই মহাকালি নদীর উপর ভারত ও নেপাল যৌথভাবে বিশ্বের অন্যতম উচ্চ ড্যাম তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।ধারচুলা ভ্যালিধারচুলার নামকরণ– ধার (উঁচু পর্বত শৃঙ্গ) এবং চুলা ( মাটির চুলহার মত দেখতে) নামক দুটি বিশেষ অর্থবহ শব্দ নিয়ে গঠিত। পিথোরাগড় জেলার ধারচুলা এই অঞ্চল কুমায়নি, রং(ভূটিয়া) ও নেপালি সংস্কৃতির মিলনস্থল এবং বিবিধতার জন্য বিখ্যাত। এই ছোট্ট শহরটি সমুদ্রতল থেকে প্রায় ৯১৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। সাধারণত কুমায়ুনি, রং(ভুটিয়া) ও নেপালি মুখ্য ভাষা। প্রধানতঃ হিন্দু ধর্মাম্বলী লোকের বেশি বাস প্রায় ৯১.৫%, তারপরেই মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৭.৬%। তাপমাত্রা ৫ থেকে ৩০ ডিগ্রী মধ্যে।রং(ভূটিয়া) - জনজাতির ট্র্যাডিশনাল পোশাকযাক ধারচুলার কথায় আসি, আগেই লিখেছি কুমায়ুন অঞ্চলের এক বিশেষ উল্লেখযোগ্য প্রাচীন শহর।ধারচুলায় স্থানীয় জনগণের চেয়ে আর্মির লোকজনের সমাগমণ বেশি এবং আর্মির অনেক ইউনিটের দপ্তর।এখান থেকে লিপুলেক পাস( উচচতা ১৬,৭৫০ ফুট)- ইন্দো-তিব্বত বর্ডার আরও প্রায় ১৩০কিমি। এই ধারচুলার উপর দিয়েই ছোট কৈলাস ও মানসসরোবর যাত্রার অন্যতম পথ। ধারচুলা থেকে প্রায় ৬৫ কিমি দূরে অবস্থিত বিখ্যাত নারায়ণ আশ্রমই( উচ্চতা 2734 m) মানস সরোবর যাত্রার প্রথম বেস ক্যাম্প, সেখান থেকে পরবর্তী ১৩ দিনের পায়ে হেঁটে যাত্রা। অবশ্য বর্তমানে ধারচুলা থেকেই হেলিকপ্টার সেবা শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর যাবত। অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে ছিপলা কেদার মন্দির, রং মিউজিয়াম, চিরকিলা ড্যাম, পাওয়ার হাউস, সোবলা, দার, হিমখোলা ফরেস্ট, পাঙগু (উচচতা ৭,৩৮২ ফুট), আস্ককোট (এখানে রাজাদের আমলের পাহাড়ি প্রাসাদ এখনও বিদ্যমান) ইত্যাদি বিশেষ ভাবে উল্লেখনীয়। বর্ষা কালে অসংখ্য সুন্দর সুন্দর ঝর্না ও ছোট্ট ছোট্ট জলপ্রপাতের দেখা মেলে যা পর্যটকের কাছে খুবই আকর্ষণীয়।চিরকিলা ড্যামগাছপালার মধ্যে টিক, ওক, দেবদার ও বিভিন্ন ধরনের ড্রাইফ্রুট যেমন আখরোট, খুমানি, পালামু ইত্যাদি পাওয়া যায়। আরও এক তথ্য বিশেষভাবে উল্লেখনীয় – এই ধারচুলার তেহসিলের সোবলা বা আরও উঁচু এলাকায় এক বিশেষ ধরনের গুল্ম বা লতা জাতীয় গাছ পাওয়া যায় যা এক ধরণের ছত্রাক জাতীয় গাছ, স্থানীয় ভাষায় কীরা/ শুঁয়াপোকা নামে পরিচিত। এই ছত্রাকের বিশিষ্ট হল জন্মের সময় ঠিক শুঁয়াপোকার মত দেখতে এবং বয়সের সাথে সাথে সবুজ ছত্রাকের রুপ নেয়।শুঁয়াপোকার ব্যবসা খুবই লাভজনক, ক্রেতা মূলত চিন ও জাপানের ব্যবসায়ীরা। এক কেজি ছত্রাক শুঁয়াপোকার দাম এই বছর ২০১৮তে ধারচুলা বাজারে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।কালী নদীপথ নির্দেশিকা ঃ-সড়ক পথ –১। হলদ্বানি/কাঠগোদাম থেকে ভায়া পিথোরাগড় – ৩১০ কিমি , ট্যাক্সি বা সরকারি বাস দ্বারা।২। বেরেলি->টনক পুর (১২০ কিমি)–ভায়া পিথোরাগড়–২৪০ কিমি ট্যাক্সি বা সরকারি বাস দ্বারা।বায়ু মার্গ – প্রস্তাবিত পিথোরাগড় পর্যন্ত। পিথোরাগড় থেকে সড়ক পথে ৯০ কিমি।