সমাজের মাপদণ্ড

এডমিন
0



বাড়ি পালানো একটি মেয়ে
সন্দেহের চাদর পথে বিছিয়ে
কিছু অপ্রিয় প্রশ্ন মাথার নিয়ে
এগিয়ে চলেছে ভিড়ের মাঝে
সমবেদনা জানানো সে-সব লোকদের খোঁজে।
তার চোখে কেবলই এক স্বপ্ন,
অচেনা শহরে মাথা গোঁজার ঠাঁই
হোক না ছোট্ট এক ঝোপর ঘর, ক্ষতি নেই।
থেকে থেকেই ব্যস্ত সে, বুকের আঁচল ঠিক করতে!
নিজের চিরমার্জিত পরিধান।
আশেপাশে ঘুরছে ভিড়,
তৈরি লোলুপ হিংস্রের দল
যে কোনও সময়েই ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে
ক্ষতবিক্ষত করবে তার কোমল তন-মন ।
যতই হোক না সে শিক্ষিতা, উচ্চপদ অধিষ্ঠিতা
বাসনার চোখে ধুলো দেওয়া খুবই মুশকিল।
মৃদু পায়ে নিশ্চুপে বেয়ে চলে লজ্জার সিঁড়ি
মুখ তুলে সামনে দ্যাখে
অসামঞ্জস্যের ঘেরাটোপে চৈত্রের ললিত আকাশ।
ঠিক তখনই,কানে কানে চুপিচুপি বলে যায় কেউ
হয়তো বা কোনও পূর্বপুরুষ কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষী,
মনে পড়ে যায় সব অতীত।
কল্পনার রথে চড়ে করে বিশ্বভ্রমণ
অবাক নয়নে দেখতে থাকে মেঘদের সংযম,
আর চোখ ঝলকানো বিদ্যুতের হম্বিতম্বি।
এক দমকা বাতাসে, লণ্ডভণ্ড পারিপার্শ্বিক
ঝট করে খুলে পড়ে জীর্ণ ফটোখানি
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের আলোকে ঝলকে সবকিছু পরিষ্কার,
মেঝেয় লুটিয়ে তার মায়েরই ছবি
হ্যাঁ,তার জন্মদাত্রী, পৃথিবীর বুকে এনেছে যে।
মা নাকি অকালে স্বর্গ যাত্রায় পাড়ি দিয়েছে
পেছনে ফেলে একরত্তি কন্যা সন্তান
পারেনি সে পেটের ভ্রূণকে হত্যা করতে
বদলে দিয়েছে নিজেই প্রাণ
সমাজের কল্যাণে! নিষ্পাপ ভ্রূণের কল্যাণে।
দুমড়ে মুচড়ে ওঠে অন্তঃকরণ
ঠাণ্ডা-গরম বাতাসের সংমিশ্রণে
এফোঁড় ওফোঁড় বয়ে যায় শিহরণ
কানে বাজে আরও এক পদধ্বনি,
ক্রমাগত নিকটে আসে, ক্ষীণ সুরে আকুতি
"যা শিঘঘির পালিয়ে যা,  মা পালিয়ে যা"
সামনে দাঁড়িয়ে নরপিশাচ খেয়ে ফেলবে অচিরে"।
কেঁপে যাওয়া চোখের পাতার ক্যানভাসে
পুনঃ জন্ম নেয় এক 'আকার'
নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তার মাঝে
ভরে যায় একে একে সব রঙ।
প্রত্যাশার, অনুভবের, স্মৃতির শুভ্র কিরণের
সবগুলোই প্রাণের প্রিয়!
ফুটে ওঠে সাদামাটা ক্যানভাসে এক নারী!
এক জ্বলজ্যন্ত নববিবাহিতার অবয়ব
যার সর্বাঙ্গে আভূষণ,
দুহাত ভরা লাল চুড়িতে
দু পায়ের পাতায় সযত্নে লাগানো আলতা,
সিঁথিতে টকটকে লাল সিঁদুর।
এগিয়ে আসে, খুব কাছে আরও কাছে
ধীরে ধীরে মিলে মিশে একাকার সব রঙ
নিষ্ফল মেয়েটি দেখতে থাকে রংমিলান্তি।
অজান্তেই ছুটে আসে ভাবনার দল
ক্রমাগতই প্রশ্ন ছুঁড়তে থাকে
আগামীর যুদ্ধে জয়ী কে, ডিম্বাণু না শুক্রাণু?
আর ভ্রূণ! বদলা নেবে সে না বদলে যাবে?
কোন দিশায় বইবে তার জীবন তরী?
দাঁড়িপাল্লায় কোন দিকে মাপবে সে নিজেকে?
নিজ স্বত্বা মুখী না সমাজতন্ত্রের দিকে?
আর কেমনেই বা অস্বীকার করবে
সমাজের মাপদণ্ড....।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !