গোলু দেবতার চিতাই মন্দির: চিঠির মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান
ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে উত্তরাখণ্ড এক বিশেষ স্থান। উত্তরাখণ্ডের কথা মনে পড়লেই কিছু বিশেষ বিশেষ স্থান চোখের সামনে ভেসে ওঠে যেমন গড়ওয়াল হিমালয়ের হরিদ্বার, দেরাদুন, ঋষিকেশ, কেদার নাথ, বদ্রিনাথ, শ্রীনগর, পৌড়ি, দেবপ্রয়াগ, কর্ণপ্রয়াগ ইত্যাদি এবং কুমায়ূন হিমালয়ের নৈনিতাল, রানিক্ষেত, আলমোড়া, পিথোরাগড়, মুন্সিয়ারী, পাতাল ভুবনেশ্বর, পাঁচাচুলো, দারমা ভ্যালি, ব্যাস ভ্যালি, ছোটা কৈলাশ ও আরও অনেকেই দর্শনীয় স্থান। উল্লেখ্য যে উত্তরাখণ্ডের হিমালয় দুই ভাগে বিভক্ত প্রথমটি কুমায়ুন ও দ্বিতীয়টি গড়ওয়াল। কুমায়ুন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা কুমায়ুনি, এই ভাষা নেপালি ভাষার সঙ্গে কিছু মিল আছে, বলাই বহুল্য যে কুমায়ূন হিমালয় ও নেপালের মাঝে বিখ্যাত কালী নদী, এই নদী লিপুলেক-কালাপানি থেকে যাত্রা শুরু করে উত্তরাখণ্ডের টনকপুরে সমতলে মিলিত হয়।
আজকের আলোচনার বিষয় হল
গোলু দেবতা বা লর্ড গোলু। কুমায়ূন অঞ্চলের কিংবদন্তী পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক ভগবানের রূপ এবং জাগ্রত দেবতা। কুমায়ূন অঞ্চলের আলমোড়া এবং
নৈনিতাল জেলায় ভবালি নামক জায়গায় গোলু দেবতার দুটি মন্দির আছে। লোকমুখে শোনা যায়
আলমোড়ার গোলু দেবতার মন্দিরটি সুপ্রাচীন। সমতল থেকে প্রায় ১৬৫০ মিটার উপরে, আলমোড়া থেকে
প্রায় 15 কিমি দূরে
পিথোরাগড় রাষ্ট্রীয় রাজমার্গের চিতাই নামক স্থানে
গোলু দেবতার মন্দির অবস্থিত, এই জন্য চিতাই মন্দির নামেও
সুপরিচিত।
অন্য এক পৌরাণিক কাহিনী
অনুসারে, গোলু দেবতা চাঁদ
রাজা বাজ বাহাদুরের সেনাবাহিনীর একজন সেনাপতি ছিলেন (1638-1678) এবং যুদ্ধে
বীরত্ব প্রদর্শন করতে গিয়ে মারা যান। তাঁর সম্মানে আলমোরায় একটি চিত্তাই মন্দির
প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এখন অবধি আপনি অবশ্যই
মানুষকে মন্দিরে গিয়ে তাদের ইচ্ছা-আর্জি, করতে দেখেছেন, তবে কেবল
উত্তরাখণ্ডের আলমোড়া এবং নৈনিতাল জেলার গোলু দেবতার মন্দিরে শুধু মাত্র একটি চিঠি
ও সাধ্যমত দামের পিতলের ঘন্টা পাঠিয়ে এই ইচ্ছাটি পূরণ হয়েছে অর্থাৎ স্বশরীরে হাজিরা
দেওয়ার দরকার নেই।
শুধুমাত্র
এখানেই শেষ নয়, গোলু দেবতা
ততক্ষনাৎ ন্যায়, বিচার করার জন্য
প্রসিদ্ধ। এই কারণে একে ন্যায় দেবতাও বলা হয়, মানে আপনি দেবতার সামনে হাত জোড় করে দর কষাকষির মত কথা বলবেন, আপনার ইচ্ছা পূরণ
হলে অবশ্যই আপনাকে যে জিনিসটা দান করার কথা প্রতিশ্রতি দিয়েছেন, সেটাকে অবশ্যই
পূর্ণ করতে হবে নইলে আপনি গোলু দেবতার রোষের সম্মুখীন হতে পারেন।
আলমোড়া ও ভবালীর
মন্দিরের প্রধান ফাটক থেকে শুরু করে সর্বত্রই দেখতে পাবেন কয়েক হাজার ঘন্টা ও তৎসহ
চিঠি। চিতাই মন্দিরের এক কর্মচারী
এমন একটি ঘন্টা দেখালেন যে ভিরমি খাওয়ার জোগাড়, কোনও এক ভক্তের ইচ্ছা পূরণ হওয়ার পর প্রায় ৮০০
কেজি ওজনের বিশালাকার ঘন্টা দান করেন। এমনই দেয়ালে এখানে ওখানে পাথরে খোদায় করা
আছে বহু লোকের ইচ্ছে ও ইচ্ছে পূরণের গাথা। কেই চাকরির জন্য, কেউ বা বিবাহের
জন্য, কেউ বা অসুস্থতার
কারণে। কোন ভাষায় নেই চিঠিপত্র, বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, ওড়িয়া, তামিল, তেলেগু ইত্যাদি ইত্যাদি। একটু মন দিয়ে চিঠি গুলো পড়লে
মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কষ্ঠের কথাগুলো উঠে আসে।
কি ভাবে পৌঁছবেন:
বায়ু মার্গ: নিকটবর্তী এয়ারপোর্ট পন্থনগর। সেখান থেকে 147 কিমি পাহাড়ি
রাস্তা।
ট্রেন মার্গ: হাওড়া থেকে কাঠগোদাম বা লালকূয়া সেখান থেকে 110/125 কিমি
গাড়িতে। কাঠগোদাম, হলদ্বানী বা
লালকূয়া থেকে ফুল ট্যাক্সি বুক করে বা শেয়ার ট্যাক্সি করেও যেতে পারেন।
ফটো ঃ নিজস্ব