পরের বসন্তেই.…..
উঁচু উঁচু অট্টালিকার পাশ কাটিয়ে এগুতেই বংবিরঙের কচিকাঁচা চারা গাছগুলি গামলার ভেতর থেকে উঁকি দিয়ে প্রায়শঃই পথ আটকে দেয়... পুকুরের পাঁকে ফেঁসে গেলে যে অবস্থা হওয়া উচিত ঠিক সে রকমই অনুভূতি, উৎসুক হয়ে চেয়ে থাকি, যেন চারাগুলো ইশারায় আমাকে কিছু বলতে চাই। খুব মনোযোগ সহকারে শোনার চেষ্টা করি কিন্তু আজ অব্দি ছাইপাশ সাংকেতিক ভাষার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝি নি, তবুও রণে ভঙ্গ দিয়ে নিজের আত্মসম্মান বোধকে ধূলিসাৎ করি নি।
হ্যাঁ এক মুঠো মাটি আর অফুরান বাতাস, অমূল্য সম্পদও বটে। কেউ বুঝেছে, কেউ বুঝেনি আবার কিছু কিছু আঁতেল বুঝেও না বোঝার নিত্য ভান করে। সেইগুলো অকৃত্তিম নাটুকে লোকগুলো ঠিক কি ধাতু দিয়ে তৈরি, খুব ভালোভাবে গবেষণার মাধ্যমে সত্য উন্মোচন করা উচিৎ।
ঝা চকচকে জাতীয় সড়কের বুকের উপর দিয়ে হুস হুস করে তীব্র গতিতে ছুটে যায় না ধরনের বাহারি রঙের বিচিত্র গাড়ীগুলো, ডিভাইডারের একফালি জায়গাতেই নিডর, নির্ভীক গোলাপের ফুল-পাপড়ি গুলো দিব্যি পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে সুখে বেচেঁ আছে, প্রতিনিয়ত কালো, বিষাক্ত ধোঁয়া হজম করে হজম শক্তি একটু বেশীই শক্তপোক্ত, সমস্ত প্রতিকুলের বাধা বিপত্তি ঠেলে বেঁচে থাকাটাই অস্তিত্বের লড়াই, জিততেই হবে, নুইয়ে পড়লেই হরে রাম হরে কৃষ্ণ!! ওখানেই শেষ, যমরাজের মতোই অতি উৎসাহী মালি সমূলে উৎপাটিত করে রাস্তার পাশে ফেলে দেবে এবং তৎক্ষণাৎ অভুক্ত নিরীহ প্রাণীর উদরে সন্মানে ঠাই পাবে। আমি স্পষ্ট ভাষায় অনুভব করি, এক একটি গোলাপ রাত দিন অস্তিত্বের লড়াই করতে করতেও আমার দিকে চেয়ে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে কিছু যেন বলার চেষ্টা করে..হয়তো." আমার থেকেও দুর্বল কেন?"
সত্যি বলছি, উত্তরের অপেক্ষায় আছি কিন্তু মনের গহীন থেকে সামান্য আশার আলো টুকুও দেখা যায় না, নিজের প্রতি নূন্যতম বিশ্বাসটুকু কেন নেই? আমি কি সত্যি সত্যিই এতোটাই দুর্বল?
আজকাল আবার সামনে টা একেবারেই টিপটপ, সন্দ্যর্য্যের ঝলকানি, এদিক ওদিক সেদিকে ঘুরে ঘুরে সেলফি তোলার যুগে রাস্তার ওপর পার্কিং বেমানানm ছোট্ট অন্ধকার মুখ দিয়ে ঢুকে গাড়ীগুলোর পাতালে পার্কিং করার সুব্যবস্থা সর্বজন বিদিত, রোমাঞ্চ অনুভব করি যখন পাতাল থেকে উঁকি দিয়ে গাড়িগুলো ধোঁয়ার কুণ্ডলী থেকে বিশুদ্ধ বাতাস টেনে গু গু করে বেরিয়ে আসে ।
পার্কিংয়ের কোনও এক কোণে, সকলের নজর এড়িয়ে টবে লাগানো চারা গাছের নরম কচি কচি পাতাগুলো বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত, অনামী পাতাগুলো নিজের অস্তিত্বের খোঁজে প্রতিটি গাড়ির মালিকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে, কিন্তু দেখবেই বা কে? তুচ্ছদের কেউ দেখেছে কি? সহানুভূতি প্রকাশ করাও কৃত্রিম, বাস্তবের সাথে মিল নেই।
মাটিতে অনাদরে লুটিয়ে পড়া হলদেটে পাতাগুলোও বেঁচে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে, প্রতিনিয়ত সজাগ দৃষ্টিতে চলার পথে প্রতিটি মানুষকে পুঙ্খানপুঙ্খভাবে জরিপ করে, কোনও এক পাতা কুড়ানি কে দেখলেই ভয়ে সিটিয়ে যায়, এইরে এবার তো জ্বলতে হবে, নিজেকে শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বাঁচার আকুতি মিনতি করে, উড়ে যেতে চেষ্টা করে, তার ইচ্ছে করে বিহঙ্গের মতো মুক্ত, সুনীল আকাশে উড়ে যায়।
শতাব্দী প্রাচীন বটগাছটিরও সুখ নেই, সেও ধুঁকছে, তার দর্প চূর্ণ করে বাতাস হঠাৎই নিজের গতি পরিবর্তন করে সকলকেই আশ্চর্যান্বিত করে তুলেছে, তপ্ত দুপুরে হাভাতে ছেলেগুলো আর ভিড় জমায় না, তার শেকড়ে ঝোলা ঝুলি করে আর পুকুরে ঝাঁপ দেয় না, খুব কষ্ট হয়, একাকীত্বে ভোগে। ভীষ্মের মত তার অটলটাও ডগমগে, পতন অনিবার্য। ধীরে ধীরে তার স্বর্ণালী আভা ফিকে, লুপ্তের দিকে, ক্রমবর্ধমান.....
ফুল আর প্রেম....ফুল আর প্রেম কি আজ অব্দি কারও পরিপূরক হয়েছে? একে ওপরের বিনা ফিকে, জীবনে নতুন করে বসন্ত আসতেই পারে যদি ফুল ও প্রেম একবার নিজ নিজ অভিমান ভুলে এক হয়, এইতো গত রাতের এক দমকা হাওয়ায় লণ্ডভণ্ড সব অহংকার, কিন্তু কেউ কে বুঝেছে কি ঘন কালো বাদলের হৃদয়ে বারবার আঘাত হানার পর্যাপ্ত চেষ্টা চলছিল দমকা বাতাস রুপি দানবের, বাদলের হৃদয় থেকে অশ্রুধারার বদলে ওলা-বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার মন আঙিনায় উদার বৃক্ষটি অপেক্ষার এক হলদেটে চাদর বিছিয়ে দেয়।
আর আমি...... পরিপার্শিক সবুজের হাটে নিজে কেমনেই নির্জীব থাকি আর নীরব ভূমিকা পালন করাও কি সাজে!!!! সত্যি সত্যিই আমি আজ , প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, অতিবিশ্বাসী, দ্বিধাহীন, স্থির লক্ষ্য, নিস্প্রাণ পাথরের বুক ছিন্ন ভিন্ন করে খুঁজে নেবো এক প্রার্থিত পথ।
ঠিক শুনেছেন পরের বসন্তেই.…..