আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি মানুষের জন্যে বিপদজনক?

এডমিন
0

                                                                সৌজন্যে - গুগল

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি মানুষের জন্যে বিপদজনক?

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি একদিন মানুষকেও ছাড়িয়ে যাবে?

সাধারণত এই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে মানুষের মনে চ্যাটজিপিটি নামের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাজারে আসার পর পরই। বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জাতীয় সফটওয়্যার নিয়ে হাজির, একে আমরা চ্যাটবট বলি। 

সোজা ভাষায় বুঝতে গেলে, চ্যাটজিপিটি হলো ভাষাভিত্তিক তথ্যভাণ্ডার এবং এই তথ্যভান্ডার কোনও পরিধি নেই। এর ক্ষমতা অপরিসীম, এই চ্যাটবট তার তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করে নিমেষের মধ্যে চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই প্রায় সব প্রশ্নেরই উত্তর দিতে সক্ষম এবং নির্ভুল।

এই চ্যাটজিপিটি রচনা লিখতে পারে, চাকরির বা ছুটির আবেদন নিখুঁত ভাবে লিখতে পারে, শুধু তাই নয় যেকোনো রিপোর্টও তৈরি করতে পারে, এমনকি গান বা কবিতাও লিখতে পারে।

আজকাল আমরা ছোটো খাটো যোগ বিয়োগ করতে যেভাবে কলকুলেটর এর উপর নির্ভরশীল ঠিক সেই ভাবেই এই প্রযুক্তি ধীরে ধীরে একদিন হয়তো আমাদের সমস্ত চিন্তা ভাবনা, উদ্বোধক শক্তিকে নিস্তেজ করে দেবে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অবদান অনিস্বীকার্য, একেবারেই অবহেলা করা যায় না, এটাও সত্য যে সতর্ক না হলে আমাদের অবস্থা রাস্তার ধারে বসে থাকা বাঁদরের মতো হবে যে নিজের খাবারটুকুও প্রাকৃতিক উপায়ে জোগাড় করতে পারে না, অন্যের অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। সুতরাং এই গবেষণায় এখনই রাশ টেনে না ধরলে হয়তো সমাজ ও মানবজাতি বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়বে।

কেন এই ভীতি?
আমার মতে এই ভয় অনেকটাই মানসিক, অজানাকে ভয় পাওয়ার মতো ভয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যদি আমাদের মনের মতো কোনও তথ্য সঠিক ভাবে পরিবেশন করতে পারে তবে কোনও সমস্যা নেই কিন্তু যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় যা আমাদের বর্তমান সময়ের এথিকসের সাথে সংঘাতপূর্ণ হয়, তখন কী হবে!”

চ্যাটজিপিটির মতো জেনারেটিভ এ.আই নিয়ে উদ্বেগ ঠিক এই কারণেই। এই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সুলিখিত উত্তর তৈরি করা সম্ভব। এর ফলে একজন ছাত্রকে সুশিক্ষিত করে তোলার যে মূল লক্ষ্য সেটা ব্যাহত হতে পারে।

হঠাৎ কেন আলোচনা?

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শুরু হয়েছে। এর গাণিতিক তত্ত্ব অনেক আগে আবিষ্কার হলেও, এই বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের জন্য ম্যাথম্যাটিক্যাল মডেলের অভাব ছিল।কিন্তু বিগত কয়েক বছরে কম্পিউটিং পাওয়ার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে , যেহেতু এই প্রযুক্তি মানুষ সম্পর্কে অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহ করে ফেলেছে, এবং সেসব তথ্য মানুষের চেয়েও দ্রুত গতিতে প্রসেস করতে পারছে, তার ফলে সাধারণ মানুষের জীবনের ওপরে এর প্রভাব পড়ছে।

সাধারণ ভাবে দেখলে, এই প্রযুক্তির অগ্রগতি তো মানুষের জন্য সুখবর, তাহলে এ নিয়ে এতো উদ্বেগ কেন?

নিশিতভাবে বলা যায় মানুষের যেসব কাজ করে তার একটা বড় অংশ আগামীতে মেশিনের হাতে চলে যাবে। অনেক জায়গাতে সেটা হয়েও গেছে। ফলে একদিকে কাজ হারানোর ভয় আর অন্যদিকে এই প্রযুক্তির অপব্যবহারের আশঙ্কা যেমন ফেক নিউজ, ফেক ইভেন্ট, এমনকি ফেক রিলেশনশিপ। নিশ্চয় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া প্রকট হয়ে উঠতে পারে বৈষম্য নামক রাক্ষসের। আমরা একসময় বলতাম ডিজিটাল ডিভাইড, যার কাছে প্রযুক্তি আছে এবং যার কাছে প্রযুক্তি নেই তাদের মধ্যকার এই গ্যাপ নিয়ে আমরা কয়েক দশক ধরেই সোচ্চার ছিলাম। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে মানুষে মানুষে, সমাজে সমাজে এবং দেশে দেশে এই বিভাজন এখন আরো বেড়ে যাবে।

এআই বিপ্লব

সাম্প্রতিককালে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জগতে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটে গেছে। অনেক কাজই এখন একটি যন্ত্র মানুষে চেয়েও দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে করে দিতে পারে এবং সুপার কম্পিউটিং পাওয়ারের কারণে এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে।

এক সময় ধারণা করা হতো- একই ধরনের যেসব কাজ বারবার করতে হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পক্ষে শুধু সেসব কাজই করা সম্ভব। এই প্রযুক্তি মানুষের করে দেওয়া প্রোগ্রামের বাইরে যেতে পারবে না। কিন্তু চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে এখন অনেক কিছুই করা সম্ভব যা মানুষ ভাবতেও পারেনি।

সব চেয়ে মজার বিষয় হলো আজকাল আমরা অ্যালেক্সা বা চ্যাটজিপিটির সাথে রসিকতা করলে সেই অ্যাপ্লিকেশন সহজেই বুঝতে পারে। শুধু তাই নয়, ব্যবহারের সাথে সাথে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন নতুন জিনিস শিখতেও পারে এবং এর মধ্য দিয়ে সে নিজেকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে থাকে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এই সব চ্যাটবটরা মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান হয়ে যেতে পারে। 

আমাদের মনে কৌতুহল জাগতেই পারে, তবে কি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স একসময় মানুষের মতো সৃষ্টিশীল হয়ে উঠবে?

অস্বীকার করে লাভ নেই, কম্পিউটার তো মানুষের চেয়ে আজকের দিনেই বেশি দক্ষ, একটি মাত্র ক্লিকে কঠিন থেকে কঠিনতম সমস্যার সমাধান করতে পারে।

যে কোন বিষয়ে আমরা দু লাইন লিখতে গেলে মাথার চুলে খুজলাতে থাকি সেখানে চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা নিজের তথ্য ভান্ডারকে বিশেষণ করে অনায়াসেই সঠিকভাবে আকাঙ্খিত লেখ চোখের সামনে পরিবেশন করছে। 

সে দিন দূর নেই, যখন আমরা শুনতে পাবো একজন চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা ও তার বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে এ.আই চিকিৎসকের মতো যাবতীয় সিদ্ধান্ত দিচ্ছে। এমন একটা বুদ্ধিমত্তা তৈরি করতে সক্ষম হবে যা এক চিকিৎসকের মতোই বুঝতে পারে, এবং রোগীর জন্য একটা ওষুধ লিখে দিতে পারে তখন কী হবে?”

একজন চিকিৎসকের পক্ষে আপনার জীবনের তাবৎ ইতিহাস মাত্র ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে দেখে, আপনার সেই ইতিহাস আরো হাজার হাজার মানুষের ইতিহাসের সাথে তুলনা করে সমস্যার সমাধান দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পক্ষে লাখ লাখ মানুষের তথ্য দেখে রোগীর ব্যাপারে কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব।

কে বেশী ক্ষমতাবান ? 

নিঃসন্দেহে মানুষ বেশী ক্ষমতাবান, ছিল, আছে ও আগামীতেও থাকবে। মানুষ যেহেতু এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বানাচ্ছে, মেশিন যদি কিছু কিছু জায়গায় মানুষকে ছাড়িয়েও যায়, মানুষ এটাকে তার গণ্ডির মধ্যেই রেখে দিবে। মানুষই নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি করবে যা কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তাকে সামাল দেওয়ার রাস্তা বের করে ফেলবে।

### ₹₹₹₹₹₹

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !