শেয়ারেন্টিং

এডমিন
0
 # শেয়ারেন্টিং
# এম_ওয়াসিক_আলি
                                                                    সৌজন্যে - গুগল


আজকের লেখার বিষয়বস্তু কিন্তু খুবই পরিচিত বিষয় নিয়ে, আমরা বিশেষ ভাবে পরিচিত আবার হতেও পারে এই বিষয়ে আমাদের জ্ঞান তলানিতে। 

যাই হোক, আজকের আলোচ্য বিষয় "শেয়ারেন্টিং"।শেয়ার ও পেরেন্টিং নামক দুটি বিশেষ শব্দ থেকে উৎপত্তি। শেয়ার মানে তথ্যের আদান প্রদান ও পেরেন্টিং মানে বাচ্চাদের লালন পালন।

শেয়া+রেন্টিং= শেয়ারেন্টিং

যায় হোক না কেন, বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা চলতে অভ্যস্ত অর্থাৎ বাবা ডারউইনকে বিশেষ ভাবে অনুসরণ করছি "সময়ের সাথে সাথে চলাই বাঞ্ছনীয়, নইলে পিছিয়ে পড়ার ভয় থাকবে"। সমাজের চোখে নিজেকে একটু ওপরে দেখানোর দৌড়ে সামিল। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নিত্য নতুন ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় উপস্থাপন করা অতি প্রয়োজনীয় হাতিয়ার।

আমরা নিজের ও পরিবারের সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সোশাল মিডিয়ায় নির্বিচারে পোস্ট করি, নিশ্চয় লোভ নামক এক প্রকার রসমালাইয়ের জন্য, একবার লাইক, শেয়ার ও কমেন্টের বন্যা বইয়ে গেলে কেল্লাফতে, নিজেকে আমরা সেলিব্রেটি ভাবতে শুরু করি। 

বর্তমান সময়ে সোশাল মিডিয়ায় আকছার দেখা যায়, মা-বাবা জন্ম নেওয়ার পর থেকেই বাচ্চার প্রতিটি দুর্লভ মুহূর্তের ছবি, ভিডিও, সম্পর্কিত লেখ পোস্ট করে চলেছেন। কারণ আগেই উল্লেখ্য করা হয়েছে, বাবা মা কতটা গর্বিত নিজের সন্তান সন্ততি ও পরিবারকে নিয়ে। নিজেদের অনাবিল আনন্দ বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন।

আজকের নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে, বাবা মায়ের জন্য সন্তান মানুষ করে তোলা কতোটা চ্যালেঞ্জিং জানি, ফলে খুব সহজেই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রয়োজনীয় উপদেশ বন্ধু বান্ধবদের থেকে পাওয়া যায়, এককথায় একঘেয়েমি জীবন থেকে সাময়িক বিরতি কার না ভালো লাগে। আবার কিছু কিছু বাবা মা, হবু বাবা মায়ের জন্য আগাম কিছু অভিজ্ঞতা যেগুলো দিন প্রতিদিন বাচ্চাকে মানুষ করতে করতে উপলব্ধি করেছেন সেগুলো, গাইড হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন।

বিশেষজ্ঞের মতে, অন্ধ হয়ে যখন বাবা মা বাচ্চাদের ব্যাক্তিগত ফটো ও ভিডিও যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে নিজের অজান্তেই, ক্ষতিকর দিকটা না ভেবেই ব্যাক্তিগত তথ্য অপরের হাতে তুলে দিতে দ্বিধা বোধ করেন না। এর প্রভাব মারাত্বক ও সুদূপ্রসারী । এটা এক বিশেষ শ্রেণীর লোকের হাতে পড়লে ভবিষ্যতে আইডেন্টিটি থ্রেফট বা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি নামক গ্যাড়াকলে পড়তে হবে। 

বাচ্চাদের ব্যাক্তিগত তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য পোস্ট করায় ভালোর দিকটা উপরে বর্ণনা করা হয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব কি হতে পারে সেই খারাপ দিকটাও দেখা যাক:-
 ১. আপনার বাচ্চার পুঙ্খানপুঙ্খ তথ্য, ভবিষ্যতে আপনার বাচ্চার জন্য ও পরিবারের জন্য সুখকর নাও হতে পারে, আপনার সঙ্গে শত্রুতা মিটাতে সবচেয়ে সোজা টার্গেট হলো বাচ্চা। কিডন্যাপ নামক শব্দের সঙ্গে আমরা বিশেষ ভাবে পরিচিত, বিস্তারিত আলোচনা করা যুক্তিযুক্ত হবে না।
 ২. ইংরেজিতে বুলিং একটা মারাত্বক শব্দ যার অর্থ হাঁসির পাত্র। এটাও হতে পারে আপনার ভুল বশত পোস্ট করা এমন ফোটো বা ভিডিও এর কারণে আপনার বাচ্চা বন্ধু বান্ধবদের কাছে হাঁসির খোরাক হতে পারে। বাচ্চার কোমল মনে এর পরিণতি মারাত্বক, ডিপ্রেশন ও আত্বহত্যার মতোও ঘটনাকে এড়ানো যাবে না।
 3. আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর যুগে সবাই ঘাপটি মেরে বসে আছে, আপনার পোস্ট করার সাথে সাথে ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন অ্যাপ আপনাকে ক্রমাগত ভাবে প্রোডাক্ট কেনার জন্য চাপ দেবে, মোবাইল, কম্পিউটার খুললেই শুধু বিশেষ ধরণের বিজ্ঞাপন চোখে পড়বে।
 4. ডিজিটাল কিডন্যাপ নামক আর এক নতুন অধ্যায় জুড়েছে, একদিন দেখবেন আপনার বাচ্চা আর আপনার থাকবে না, লিগ্যাল ভাবে কেউ আপনার বাচ্চাকে ছিনিয়ে নিতে পারে। একটু বিস্তারিত আলোচনা করা উচিত, আপনি প্রতিনিয়ত বাচ্চার যে ফোটো ও ভিডিও পোস্ট করেছেন কোনও অসাধু ব্যাক্তি সেই গুলি চুপি চুপি নিজের কম্পিউটারে ডাউনলোড করে রেখে দিল, সে কিন্তু বাচ্ছার প্রতিটি ক্ষণ এর তথ্য নিখুঁত ভাবে পরিচিত। একদিন সে যদি আপনার বাচ্চাকে নিজের বাচ্চা বলে কোর্টে মামলা দায়ের করেন, ভাবুন, তার কাছে সব প্রমাণ আছে।
 5. কেউ হয়তো আপনার বাচ্চার ফটোতে বিরূপ মন্তব্য করলেন, এর প্রভাব ব্যক্তিগত জীবনে মারাত্বক। নিজের শত্রু নিজেই তৈরি করবেন।
 
সুতরাং শেয়ারেন্টিং থেকে বাঁচা খুবই দরকার। শেয়ারেন্টিং করতে আমিও নিষেধ করছি না, কিন্তু শেয়ার করার আগে কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা উচিত। 

 ১. নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে ব্যক্তিগত সেটিং এ বিশেষ ভাবে ধ্যান দেওয়া উচিত। কোন ফোটো বা ভিডিও আপলোড করছেন সেটা ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে এবং সেটা যেন খুবই কম হয়।
 2. বন্ধু বান্ধব ও আত্বিয়সোজন দের কে অযথা নিজের বাচ্চার ফটো আপলোড করা থেকে বিরত রাখুন।
 3. ফোটো ও ভিডিও পাবলিক না করে নির্দিষ্ট পরিধির লোকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন।
 
সর্বশেষে একটাই অনুরোধ ক্লিক করার আগেই ভাবুন, একবার ক্লিক করলেই কেল্লাফতে তার প্রভাব হয়তো তৎক্ষণাৎ নাও হতে পারে। সুতরাং সাবধান থাকুন, খুব সাবধানে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করুন। নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন।

*****
কপিরাইট @এম ওয়াসিক আলি

**লেখার বিষয়বস্তু একান্তই ব্যক্তিগত। কারও অমত থাকলে দয়া করে এড়িয়ে যাবেন।

**বিনা অনুমতিতে কপি ও পেস্ট করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

### 

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !