তথ্য ও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি
সৌজন্যে - গুগল
আমরা ইতিমধ্যে একটি সাইবার সমাজে বাস করছি এবং টেকনোলজির শাখা প্রশাখা আমাদের জীবনের প্রতিটি রন্ধে রন্ধে প্রবেশ করেছে। এই ডিজিটাল যুগে তথ্য, মানব দেহের ছোট্ট একটা কোষের মতই গুরুত্বপুর্ণ। তথ্য আমাদের জীবন নৌকাকে প্রভাবিত করছে প্রতিনিয়তই। বর্তমান সমাজে এটিকে উপেক্ষা করা বা আমার কিছুই যায় আসে না এমন ভান করা বন্ধ করতে হবে।
বললে ভুল হবে না, তথ্য আধুনিক যুগের অক্সিজেন, একে কাঁটাতারের বেড়া আবদ্ধ করা কার্যত অসম্ভব। এটি অনায়াসেই চোখের পলকে, শীর্ষ দেয়ালের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে এবং বিদ্যুতায়িত হয়ে নিমেষে সীমানা পেরিয়ে যায়।
কিছু সময় আগেও তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের বিশেষ মাথা ব্যথা ছিল না। খাওয়া এবং শ্বাস নেওয়া যেমন জীবনের মৌলিক প্রয়োজনীয়তাগুলির মধ্যে একটি, তথ্যের গোপনীয়তাও ঠিক তেমনি জীবনের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা।
সুতরাং তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে কি চিন্তা ভাবনা ছিল বা এখন কীভাবে চিন্তা করি, সে বিষয়ে দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তনের সময় এসে গেছে এবং তা আমাদের সবাইকে পরিবর্তন করতে হবে।এককথায় ডিজিটাল যুগে, গোপনীয়তাকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে।
দুঃখের বিষয়, আজ আমরা এখানেই ভূল করছি, সেটা হয়তো বা অজান্তেই। আর সেই ছোট্ট একটা ভূলের মাশুল প্রতিনিয়ত গুনছি, হঠাৎ করেই আমাদের ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খালি হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছি, আবার কখন বা মান ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। মুক বধির হয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
প্রতিবার আমরা যখন যেকোনো ধরনের অনলাইন কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে থাকি, যেমন ওয়েব সাইট সার্ফিং, ফেসবুক, ইউটিউব, হটসঅ্যাপ ইত্যাদি ইত্যাদি.... আমরা সহজেই আমাদের অবহেলিত ব্যক্তিগত তথ্য সহজেই অন্যের হাতে তুলে দিতে দ্বিধা বোধ করি না। সে তথ্য/ডাটা নিয়ে আতস কাঁচের নিচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনায়াসেই করা যেতে পারে। আমরা যে ওয়েবসাইটগুলিতে বিচরণ করি সেগুলি আমাদের সিস্টেম এর IP ঠিকানা, অবস্থান, ব্রাউজার এবং অপারেটিং সিস্টেম, স্ক্রিন রেজোলিউশন, ISP এবং আরও অনেক তথ্য গোপনে সংগ্রহ করে সুকৌশলে নিজেদের তথ্যভান্ডার/ডাটাবেসে সংরক্ষিত করে। ফলস্বরূপ একদিন যার খুশি সেই আপনার অনিচ্ছেই, আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে উঁকি দিতে থাকে, তখন আমাদের লুকানোর কিছুই থাকে না।
আমরা পাসওয়ার্ড যত্র তত্র সেভ করে রাখতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি যাতে পরবর্তীতে সহজেই পছন্দের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্লাটফর্মে ও ওয়েবসাইটে লগইন করতে পারি।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে,পাসওয়ার্ডগুলি অন্তর্বাসের মতো। এর গোপনীয়তা রক্ষা করা উচিৎ। অন্যের সাথে কখনোই আদান প্রদান করা মোটেও সমুচিত নয়। প্রায়শই পরিবর্তন করা উচিত৷
আজকাল আমরা খুব বেশি বেশি মাত্রায় আধার কার্ড নাম্বার অথবা বায়োমেট্রিক ডেটা দিচ্ছি। যদি একজন খারাপ লোক আমাদের বায়োমেট্রিক ডেটা চায়, তাহলে মনে রাখবেন: তার আমাদের প্রকৃত আঙ্গুলের ছাপের প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র সেই ডেটা যা আমাদের আঙ্গুলের ছাপের প্রতিনিধিত্ব করে সেগুলো অতি কৌশলে হস্তগত করে। আর আমরা মোটেও দ্বিধা বোধ করি না, আমাদের কিছুই আসে যায় না!!
কিন্তু সত্যি কি কিছুই যায় আসে না?
সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কেলেঙ্কারী একটি বিশেষ উদ্বেগের বিষয়। এই স্ক্যামগুলির সাথে, আক্রমণকারীরা একটি পোস্ট উপস্থাপন করে, যার উদ্দেশ্য লক্ষ্য ব্যবহারকারীকে একটি লিঙ্কে ক্লিক করার জন্য। এই লিঙ্কটি সাধারণত ব্যবহারকারীকে কিছু দূষিত কোড ডাউনলোড করার দিকে নিয়ে যায় যা ব্যবহারকারীর কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইসে তথ্য চুরি করার সম্ভাবনা রাখে। এই স্ক্যামগুলিকে কখনও ফিশিং কখনও বেটিং বা সেইসাথে ক্লিক-জ্যাকিংও বলা হয়৷ তাদের যে নামেই ডাকা হোক না কেন, শুধু জেনে রাখুন যে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিটি পোস্টে ক্লিক করা নিরাপদ নয়। প্রতিটি লিঙ্ককে সন্দেহের সাথে আচরণ করার জন্য আপনার বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যেগুলি ক্লিক টোপের মতো দেখায়৷ স্ক্যামগুলিকে আজকে দুর্বল ব্যাকরণ এবং বানান ভুল দ্বারা চিহ্নিত করা যায় না, যেমনটি একসময় ছিল।
একটু সন্দেহপ্রবণ হন। একটি খুব বড় সংখ্যক আক্রমণ সহজ সামাজিক প্রকৌশলের উপর নির্ভর করে। পরের বার নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন যখন আপনি একটি ই-মেইল পাবেন দাবি করুন যে আপনি একটি আইপ্যাড জিতেছেন বা একটি আমাজন থেকে প্যাকেজ পেয়েছেন — এটি কি বাস্তব?
আমি বিশ্বাস করি আমরা সকলেই আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য দায়ী থাকব – কোনো বিক্রেতা, পরিষেবা প্রদানকারী, এমনকি সরকারী সংস্থাও আমাদের রক্ষা করবে না।
উপসংহারে বলা যায় যে আপনি বা আমি যদি একটি কোম্পানিকে একটি ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করি তার ভবিষ্যত কি হতে পারে? অবশ্যই তারা শেষ পর্যন্ত সেই তথ্য বিক্রি করবে, সেগুলো ফাঁস করবে, নয়তো হারাবে বা হ্যাক হয়ে যাবে । ধীরে ধীরে তথ্যের গোপনীয়তার অকাল মৃত্যু ঘটবে। এক কথায় সহজেই সাইবার ক্রাইমের কবলে পড়বো এবং সেটাই হবে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় হুমকি।
আমাদের ব্যক্তিগত ইলেকট্রনিক তথ্যকে প্লুটোনিয়ামের মতো একই যত্ন এবং সম্মানের সাথে ব্যবহার করা উচিত। হাতছাড়া হলেই বিপজ্জনক এবং তার প্রভাব থাকে দীর্ঘস্থায়ী অর্থাৎ একবার ফাঁস হয়ে গেলে আর ফেরত পাওয়া যায় না।
সুতরাং যে ভাবে একমুখী রাস্তা পার হওয়ার আগে সর্বদা উভয় দিকে তাকান ঠিক সেভাবেই তথ্যের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার বিষয়ে নিজেকে সুশিক্ষিত করে তুলুন, নিজে বুঝুন ও অন্যকে বোঝান।
+++++++