দৈত্য

এডমিন
0
 দৈত্য 

চিত্র ঃ সৌজন্যে গুগল 

আমি গ্রাম্য পরিবেশে বেড়ে ওঠা যুবক। সদ্য শহরে এসেছি কাজের খোঁজে। একেবারেই অজ পাড়াগাঁয়ের গেঁয়ো যুবক। শহরের চাকচিক্য ও আলো আঁধারির জীবন সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞানটুকুও ছিলো না। শহুরে জীবনে পদে পদে প্রতিটি ক্ষণে হোঁচট খাচ্ছি, না ঠিক মতো চলতে পারি, না পারি গুছিয়ে দুটো ভালো কথা বলতে। সবকিছুতেই গেঁয়ো গেঁয়ো ভাব। শহুরে ব্যস্ত লোকজন সন্দেহের চোখে দেখে আর মনে হয় মনে মনে গালিগালাজ করতে থাকতে "আরও এক গাঁইয়া ভুত আমাদের শহরটাকে নোংরা করতে এসে গেছে"।

আমি কিন্তূ ওসব কথা গায়ে মাখি না, কে কি বললো বা কি ভাবছে সে নিয়ে আমার কোনও মাথা ব্যাথা নেই। শহর কি কারুর বাবার ব্যাক্তিগত সম্পত্তি নাকি?

একটা বিষয়ে আলোকপাত করা খুব জরুরি সেটা হলো আমি কিন্তু শহুরে জীবন একেবারেই পছন্দ করি না। কংক্রিটের ভিড়ে দম বন্ধ হয়ে আসে, ছটপট করতে থাকি। কিন্তু এই শহরে আমি একটা বিশেষ কাজে এসেছি - আমি শহুরে মেয়ে বিয়ে করতে চাই। আমার একমাত্র স্বপ্ন!!! আমি চাই যেকোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করতে।

আমারই গ্রামের পরিচিত এক সুহৃদ ব্যাক্তি, বহুদিন ধরেই শহরে বাস করেন। একদিন হঠাৎ করেই সেই দেবদূতের সাথে সাক্ষাৎ। উনার মুখেই শুনেছিলাম তিনি নাকি শহরে এক অফিসে বড় অফিসার। এদিক সেদিকের কিছু অসংলগ্ন কথাবার্তা বলার পর আসল কথাটা পাড়লাম বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে, পরিপাট্যে । প্লিজ প্লিজ কাকু, আমার জন্য একটি সুন্দর সুশীল শহুরে মেয়ে খুঁজে দিন। কাকু  কাকু সম্বোধনে একটু খেই খেলেন কিন্তু সত্যি সত্যিই সম্পর্কে পাড়ার কাকু উনি।  আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ কাকু থেকে দাদাতে ফিরে আসতেই তিনি আর আমার অনুনয় বিনয় ফেলতে না পেরে আমার প্রতি সদয় হলেন এবং আমার জন্য মানানসহ শহুরে মেয়ে খুঁজে দেওয়ার অঙ্গীকার করলেন। তার জন্য যে আমাকে বিশেষ মূল্য চোকাতে হবে সেটা জানাতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করলেন না। আমিও রাজি। প্রায় মাস খানেক কেটে যাওয়ায় পর পুনরায় সেই সুহৃদ ব্যাক্তির পদধূলি আমার এক ১০ বাই ১২ এর মহলে পড়লো। আমার সাকিন, স্বপ্নের রাজপ্রাসাদ। দূর থেকেই দেখে বেতের মোড়াটি রুমাল দিয়ে বেশ ঘসে ঘষে পরিষ্কার করে বসতে দিলাম। মুচকি হেঁসে তিনি জানালেন খুশির খবর আছে ভাইটি....!!! ভাবতেই পারছি না আমার বিয়ের প্রস্তাব? যথারীতি প্রস্তাব পেয়ে আমি খুশিতে গদগদ -আত্মহারা। যাই হোক, নির্ধারিত দিন -ক্ষণে, রওনা দিলাম পাত্রীর দর্শনে। এক অসাধারণ স্বর্গীয় অনুভুতি হচ্ছিল, নিজেকে সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছিল সে বিস্তারিত বর্ণনা বরং থাক!!

এক বিশাল বাড়ীর সামনে এসে ঠিকানাটি নিখুঁত ভাবে পুঙ্খানপুঙ্খভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করলাম। ইয়া মস্ত বাড়ির সাইজ দেখে ভীমরতি খাওয়ার মতো অবস্থা প্রায়, ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সুহৃদ ব্যাক্তি কি আমার সাথে মশকরা করলেন নাকি? ভেতরে ঢুকবো কি না ঢুকবো, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না ঠিক তখনই নিজে নিজেই বুলন্দ- দরওয়াজা ভেতরে লুকিয়ে থাকা একটি গেট খুলে গেল, প্রায় ৬ ফুটের বেশি উচ্চতার এক সুবিশাল পাহাড়সম ইয়া মস্ত বড় গোঁফ ওয়ালা প্রহরী বাজখাই গলায় বললেন "আপ লোগ আন্দার আইয়ে, সাহাব ইন্তেজার কর রহে হ্যায়"!!!

বাপরে বাপ কোথায় এলাম, অবস্থা শোচনীয়, মৃদু স্বরে নিজেকেই বললাম, চল তাড়াতড়ি পালিয়ে যায়? প্রস্তাবটা যুক্তিযুক্ত মনে হলো, পালিয়ে গেলেই প্রাণ রক্ষার অন্তত একটা সুযোগ পাবো। যেই গেটের দিকে ছুট দিলাম সঙ্গে সঙ্গেই গেট নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে গেল, কি ভুতুড়ে কান্ড রে বাবা!!

গোঁফ ওয়ালা প্রহরী দুই জনকে টেনে হিচড়ে একটা ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন, "আপ লোগ ভাগনে কে কৌশিস না করে"!! সুবোধ বালকের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে জুবুথুবু হয়ে সোফার এক কোণে বসে পড়লাম আর মনে মনে সুহৃদ ব্যাক্তির মুণ্ডুপাত  করতে লাগলাম।

প্রায় মিনিট দুয়েক পর এক সুমধুর শব্দে সম্বিৎ ফিরে পেলাম, দেখি সামনে এক সুন্দরী বালিকা ট্রেতে লাল রঙের পানীয় নিয়ে দাড়িয়ে আছে, খপ করে একটি গ্লাস তুলে ঢক ঢক করে এক নিমেষেই শেষ করলাম, মেয়েটি দেখি কান্ড কারখানা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। তার হাঁসি দেখে মেজাজটা আরও তিরিক্ষি হয়ে গেল!! কি বিছ্রি হাঁসি রে বাবা কিন্তু ভয়ে কিছুই উচ্চারণ করতে পারছি না। মেয়েটি চলে যাওয়ার পর এক সুপুরুষ ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলেন। তাকে দেখা মাত্রই পা দুটো রিমোট চালিত যন্ত্রের মতো নিজে নিজেই দাড়িয়ে গেল।

আরে বসো বাবা বসো, তোমরা অতিথি, আর অতিথি হলো দেব তুল্য!! আহা আমার কি সৌভাগ্য যে তোমাদের পবিত্র পদধূলি আমার গরীব কুঠিরে পড়েছে। আমার অবস্থা মূর্ছা যাওয়ার মতো, হচ্ছেটা কি কিছুই বুঝতে পারছিনা, কোথায় এলাম, কে এরা, কি চায়? কি জানি ভাগ্যে কি আছে? কোন যাঁতাকলে পড়লাম রে বাবা!! 

সোফায় বসে আছি, হাত-পা একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে, অস্ফুষ্ট স্বরে বললাম, আমরা আসি!!

সে কি বাবা, এমন অলক্ষুণে কথা মুখে আনতে নেই!! বসো মেয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করছি। তোমরা একটু অপেক্ষা করো, আমি ভেতর থেকে আসছি বলে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর অতীব সুন্দরী ললনা, রাজকন্যার বেশে, লজ্জিত নয়নে সামনে এসে দাঁড়ালো, পাশে সত্তরোর্ধ মহিলা, দুধ সাদা চুল, পান খেয়ে লাল টকটকে ঠোঁট, ধব ধবে ফর্সা, মসৃণ ত্বক।

এই যে নাতি, এদিকে নয় ওদিকে কন্যা!!

আমি কিন্তু আপনাকেই বিয়ে করতে চাই!!

ফোকলা দাঁতের ফাঁকে ফিক করে হেসে বললেন, ও মরণ, সামনে এতো সুন্দরী রাজকন্যের মতো নাতনি আমার, আর আবার সাথে মজা করছো, বেশ বেশ!!

না, দিদিমা, আমি সত্যি বলছি......

রাজকন্যা ও তার পৃত্যদেব রেগে আগুন, কটমট করে তাকিয়ে আছে, দেখেই রক্ত হিম হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। মনকে শক্ত করে বললাম , আমি রাজকন্যা নয়, রাজকন্যের দিদিমাকেই বিয়ে করতে চাই!!

দিদুমার ডান হাতখানি নিজের দু হাতে শক্ত করে চেপে ধরে বললাম "তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম বৃষ্টিভেজা নিয়ন আলোয়, সেই দেখাতে মনে নেমেছিল মহাপ্রলয়, হেঁটেছিলাম দু'জনে দেবদারুর ছায়াপথে। "

কিন্তু আমার ভাগ্য বিরূপ, গল্পটা রয়ে গেল অনেকটা বাকি।

হঠাৎ করে সেই দৈত্যের মতো নিষ্ঠুর সেই প্রহরী, উঠ হারামজাদা উঠ, বলেই সজোরে এক থাপ্পড়। কণ্ঠস্বরটি খুবই চেনা চেনা লাগছে। এবার থাপ্পড় নয়, মনে হচ্ছে কঞ্চি দিয়ে সপাসপ পিঠে পড়ছে, মা মা চিৎকার করে উঠলাম, চোখ খুলে দেখি, বাবা নামক সেই পরিচিত দৈত্য!!!

এদিক সেদিক না দেখে এক লম্বা লাফ দিয়ে পগার পার!!!! 

একলা হয়ে গেলাম আবার, দিয়ে গেলে তুমিও আমায় ফাঁকি।আজও একলা হাঁটে প্রেমিক বৃষ্টিভেজা রাস্তাতে এসেছে আজ প্রেমের শাওন, তাই বুঝি অবুঝ এ মন স্যাঁতস্যাঁতে। 

শুধু তোমারই স্পর্শ আমার দেহ জুড়ে থাকুক,এ নিয়েই বাঁচবো আমি, তোমার স্মৃতি আমায় আগলে রাখুক। 

ভালো থেকো রাজকন্যের দিদিমা।

**"""

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !